:::: সূচীপত্র ::::

সুকান্তের ভট্টাচার্যের কবিতা

ছুরি

বিগত শেষ-সংশয়; স্বপ্ন ক্রমে ছিন্ন,
আচ্ছাদন উন্মোচন করেছে যত ঘৃণ্য,
শঙ্কাকুল শিল্পীপ্রাণ, শঙ্কাকুল কৃষ্টি,
দুর্দিনের অন্ধকারে ক্রমশ খোলে দৃষ্টি।
হত্যা চলে শিল্পীদের, শিল্প আক্রান্ত,
দেশকে যারা অস্ত্র হানে, তারা তো নয় ভ্রান্ত।
বিদেশী-চর ছুরিকা তোলে দেশের হৃদয়-বৃন্তে
সংস্কৃতির শত্রুদের পেরেছি তাই চিনতে।
অবগুণ্ঠিতা
সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের কবিতা


আমি বসনে ঢেকেছি মুখ
দেখিতে তোমায় !
দূরে স'রে যাই, বুকে
আঁকিতে তোমায় !
তুমি অভিমান-ভরে ফিরে যেয়ে না,
নিরাশ নয়নে বঁধু তুমি চেয়ে না ;
লীলার ছল

সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের কবিতা
আমি যদি চাই, অবগুণ্ঠনে
তুমি মুখখানি ঢাক ;
নয়ন ফিরালৈ, তবে, অনিমিখে
কেন গো চাহিয়া থাক !
এমনি করিয়া চিরদিন কিগো !
জড়ায়ে রাখিবে মোরে ?
তবু কাছাকাছি হবে না ? আমার
জীবন দিবে না ভ'রে ?
সহজিয়া
সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের কবিতা

ফুলের যা' দিলে হ'বেনাকো ক্ষতি
অথচ আমার লাভ,
আমি চাই সেই সৌরভ,—শুধু—
অতনু অতল ভাব ।
আমি চাই সেই দূর-হ'তে-পাওয়া
আমি চাই মধু-মশ্‌গুল হাওয়া,
অন্তরে চাই শুধু রূপসীর
অরূপ আবির্ভাব,
যাহা দিলে তার ক্ষতি নাই, তবু
আমার পরম লাভ ৷
সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের কবিতা
চার্ব্বাক ও মঞ্জুভাষা

বনপথে চলেছে চার্ব্বাক,
সূৰ্য্যতাপে স্পন্দিত সে বন ;
ক্লান্ত আঁখি, চিন্তিত, নির্ব্বাক্,
বিনা কাজে ফিরিছে ভুবন ।

হ্রদের দক্ষিণ কূলে ভিড়ি'
শ্যামলেখা শোভিছে শৈবাল,
মরালীর পক্ষে চন্ধু রাখি'
আঁখি মুদে চলেছে মরাল।

তীর তীরে ঘন সারি দিয়ে
দেবদারু গড়েছে প্ৰাচীর,
বনস্থলী-মধুচক্র ভরি'
রশ্মি-মধু ঝরিছে মদির।
সুকান্তের ভট্টাচার্যের কবিতা
প্রিয়তমাসু

সীমান্তে আজ আমি প্রহরী।
অনেক রক্তাক্ত পথ অতিক্রম ক'রে
আজ এখানে এসে থমকে দাঁড়িয়েছি—
স্বদেশের সীমানায়।

ধূসর তিউনিসিয়া থেকে স্নিগ্ধ ইতালী,
স্নিগ্ধ ইতালী থেকে ছুটে গেছি বিপ্লবী ফ্রান্সে
নক্ষত্রনিয়ন্ত্রিত নিয়তির মতো
দুর্নিবার, অপরাহত রাইফেল হাতে;
—ফ্রান্স থেকে প্রতিবেশী বার্মাতেও।
সুকান্তের ভট্টাচার্যের কবিতা
মুক্ত বীরদের প্রতি

তোমরা এসেছ, বিপ্লবী বীর! অবাক অভ্যুদয়।
যদিও রক্ত ছড়িয়ে রয়েছে সারা কলকাতাময়।
তবু দেখ আজ রক্তে রক্তে সাড়া-
আমরা এসেছি উদ্দাম ভয়হারা।
আমরা এসেছি চারিদিক থেকে, ভুলতে কখনো পারি!
একসূত্রে যে বাঁধা হয়ে গেছে কবে কোন্ যুগে নাড়ী।
সুকান্তের ভট্টাচার্যের কবিতা
দিনবদলের পালা

আর এক যুদ্ধ শেষ,
পৃথিবীতে তবু কিছু জিজ্ঞাসা উন্মুখ।
উদ্দাম ঢাকের শব্দে
সে প্রশ্নের উত্তর কোথায়?
বিজয়ী বিশ্বের চোখ মুদে আসে,
নামে এক ক্লান্তির জড়তা।
সুকান্তের ভট্টাচার্যের কবিতা
একুশে নভেম্বরঃ ১৯৪৬

আবার এবার দুর্বার সেই একুশে নভেম্বর—
আকাশের কোণে বিদ্যুৎ হেনে তুলে দিয়ে গেল
                          মুত্যুকাঁপানো ঝড়

আবার এদেশে মাঠে, ময়দানে
সুদূর গ্রামেও জনতার প্রাণে
হাসানাবাদের ইঙ্গিত হানে
প্রত্যাঘাতের স্বপ্ন ভয়ঙ্কর
আবার এসেছে অবাধ্য এক একুশে নভেম্বর।।
সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের কবিতা
গান


মুখখানি তার পদ্মকলি
ভাবের হাওয়ায় দোদুল্‌-দুল্‌ !
সুখের স্বপন, বুকের সে ধন,
দুখের আপন সে বুল্‌বুল্‌
ভুবন-ভোলা নয়ন দু'টি
খোঁজে না ছিল, নেয় না ত্রুটি,
ছুটির হাওয়া ছুটিয়ে সে দেয়,—
আপন-ভোলা মধুর ভুল !