:::: সূচীপত্র ::::
১১
গোধূলি

কোথা রে রাখাল-চূড়ামণি ?
গোকুলের গাভীকুল, দেখ, সখি, শোকাকুল,
না শুনে সে মুরলীর ধ্বনি !
ধীরে ধীরে গোষ্ঠে সবে পশিছে নীরব,—
আইল গোধুলি, কোথা রহিল মাধব !

আইল লো তিমির যামিনী ;
তরুডালে চক্রবাকী বসিয়া কাঁদে একাকী
কাঁদে যথা রাধা বিরহিণী !
কিন্তু নিশা অবসানে হাসিবে সুন্দরী ;
আর কি পোহাবে কভু মোর বিভাবরী৩০ ?


ওই দেখ উদিছে গগনে
জগত-জন-রঞ্জন  সুধাংশু৩১ রজনীধন,
প্রমদা কুমুদী হাসে প্রফুল্লিত মনে ;
কলঙ্কী শশাঙ্ক, সখি, তোষে লো নয়ন
ব্রজ-নিষ্কলঙ্ক-শশী৩২ চুরি করে মন।


হে শিশির, নিশার আসার !
তিতিও ন ফুলদলে ব্রজে অাজি তব জলে,
বৃথা ব্যয় উচিত গো হয় না তোমার ;
রাধার নয়ন-বারি ঝরি আবিরল,
ভিজাইবে আজি ব্রজে— যত ফুলদল !


চন্দনে চর্চিয়া কলেবর,
পরি নানা ফুলসাজ, লাজের মাথায় বাজ ;
মজায় কামিনী এবে রসিক নাগর ;
তুমি বিনা, এ বিরহ, বিকট মূরতি,
কারে আজ ব্রজাঙ্গনা দিবে প্রেমারতি ?


হে মন্দ মলয় সমীরণ,
সৌরভ ব্যাপারী৩৩ তুমি, ত্যজ আজি ব্ৰজভুমি
অগ্নি যথা জ্বলে তথা কি করে চন্দন ?
যাও হে, মোদিত৩৪ কবলয়৩৫ পরিমলে,
জুড়াও সুরতক্লান্ত৩৬ সীমন্তিনী দলে !


যাও চলি, বায়ু-কুলপতি,
কোকিলার পঞ্চস্বর বহ তুমি নিরন্তর
ব্রজে আজি কাঁদে যত ব্রজের যুবতী !
মধু ভণে, ব্রজাঙ্গনে, করে না রোদন,
পাবে বঁধুঅঙ্গীকারে শ্ৰীমধুসুদন !


--------xXx--------

৩০. রাত্রি
৩১. চন্দ্র।
৩২. বৃন্দাবনের কলঙ্গহীন চন্দ্রস্বরূপ কৃষ্ণ।
৩৩. ব্যবসায়ী। নিতান্ত লৌকিক শব্দ।
৩৪. আমোদিত।
৩৫. পদ্ম।
৩৬. রতিক্লান্ত।

সূত্র : মধুসূদন রচনাবলী-সব্যসাচী রায় (সম্পাদনায়)