উপক্রম
যথাবিধি বন্দি কবি, আনন্দে আসরে,
কহে, ষোড় করি কর, গৌড় সুভাজনে;—
সেই আমি, ডুবি পূর্ব্বে ভারত-সাগরে১,
তুলিল যে তিলোত্তমা-মুকুতা যৌবনে;—
কবি-গুরু বাল্মীকির প্রসাদে তৎপরে,
গম্ভীরে বাজায়ে বীণা, গাইল, কেমনে,
গম্ভীরে বাজায়ে বীণা, গাইল, কেমনে,
নাশিলা সুমিত্ৰা-পুত্র, লঙ্কার সমরে,
দেব-দৈত্য-নরাতঙ্ক—রক্ষেন্দ্র-নন্দনে২;—
কল্পনা দূতীর সাথে ভ্ৰমি ব্রজ-ধামে
শুনিল যে গোপিনীর হাহাকার ধ্বনি,
(বিরহে বিহ্বলা বালা হারা হয়ে শ্যামে;)৩—
বিরহে-লেখন পরে লিখিল লেখনী
বিরহে-লেখন পরে লিখিল লেখনী
যার, বীর জায়া-পক্ষে বীর পতি-গ্রামে৪,
সেই আমি, শুন, যত গৌড়-চূড়ামণি!—
১.
মহাভারতকে সাগরের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে।
২.৩.৪.
মেঘনাদবধ কাব্য, ব্রজাঙ্গনা কাব্য ও বীরাঙ্গনা কাব্যের উল্লেখ করেছেন কবি।
২
২
ইতালী, বিখ্যাত দেশ, কাব্যের কানন,
বহুবিধ পিক যথা গায় মধুস্বরে,
সঙ্গীত-সুধার রস করি বরিষণ,
বসন্ত আমোদে মন পুরি নিরন্তরে;—
সে দেশে জনম পূর্ব্বে করিলা গ্রহণ
ফ্রাঞ্চিস্কো পেতরাকা৫ কবি; বাক্দেবীর বরে
বড়ই যশস্বী সাধু, কবি-কুল-ধন,
রসনা অমৃতে সিক্ত, স্বর্ণ বীণা করে।
কাব্যের খনিতে পেয়ে এই ক্ষুদ্র মণি,
স্বমন্দিরে প্রদানিলা বাণীর চরণে
কবীন্দ্র; প্রসন্নভাবে গ্রহিলা জননী
(মনোনীত বর দিয়া) এ উপকরণে।
ভারতে ভারতী-পদ উপযুক্ত গণি,
উপহার রূপে আজি অরপি রতনে।৬
৫.
ফ্রান্সিকো পের্ত্রাকা—(১৩০৪-১৩৭৪) ইতালীয় কবি। প্রথম সনেট রচয়িতা।
৬.
বাঙালী কবি মধুসূধন প্রথম সনেট বা চতুর্দশপদী কবিতা রচনা করে ইতালীয় কবিকে শ্রদ্ধা
নিবেদন করছেন। কবি কবিতাটি রচনা করেছিলেন ফরাসীদেশের ভরসেলস নগরে।