৩
বঙ্গভাষা
হে বঙ্গ,
ভাণ্ডারে তব বিবিধ রতন;—
তা সবে,
(অবোধ আমি!) অবহেলা করি,
পর-ধন-লোভে মত্ত,
করিনু ভ্রমণ
পরদেশ,
ভিক্ষাবৃত্তি কুক্ষণে আচরি।
কাটাইনু বহু
দিন সুখ পরিহরি !
অনিদ্রায়,
অনাহারে সঁপি কায়, মনঃ,
মজিনু বিফল তপে
অবরেণ্যে বরি;—
কেলিনু শৈবালে;
ভুলি কমল-কানন !
স্বপ্নে তব কুললক্ষ্মী
কয়ে দিলা পরে—
“ওরে বাছা মাতৃ-কোষে রতনের
রাজি,
এ ভিখারী-দশা
তবে কেন তোর আজি ?
যা ফিরি,
অজ্ঞান তুই, যা রে ফিরি ঘরে!”
পালিলাম আজ্ঞা
সুখে; পাইলাম কালে
মাতৃ-ভাষা-রূপ
খনি, পূর্ণ মণিজালে।।
8
কমলে কামিনী
কমলে কামিনী আমি হেরিনু স্বপনে
কালিদহে। বসি বামা শতদল-দলে
(নিশীথে চন্দ্রিমা
যথা সরসীর জলে
মনোহরা।) বাম করে সাপটি হেলনে
গজেশে,
গ্রাসিছে তারে উগরি সঘনে।
গুঞ্জরিছে অলিপুঞ্জ
অন্ধ পরিমলে,
বহিছে দহের বারি মৃদু কলকলে।–
কার না ভোলে
রে মনঃ এ হেন ছলনে !
কবিতা-পঙ্কজ-রবি,
শ্রীকবিকঙ্কণ,
ধন্য তুমি বঙ্গভূমে !১ যশঃ-সুধাদানে
অমর করিলা তোমা
অমরকারিণী
বাগ্দেবী ! ভোগিলা দুখ জীবনে, ব্রাহ্মণ,
এবে কে না পূজে
তোমা,মজি তব গানে?—
বঙ্গ-হৃদ-হ্রদে
চণ্ডী কমলে কামিনী।।
১.
কবিকঙ্কন মুকুন্দরাম চক্রবর্তী অন্যতম শ্রেষ্ঠ বাঙালী কবি। তাঁর রচিত মঙ্লকাব্য
কবিকঙ্কণ-চণ্ডীতে যে কমলে কামিনীর চিত্র অঙ্কিত হয়েছে মধুসূধন তাঁর সনেটে তাই উপকরণরূপে গ্রহন করেছেন।