:::: সূচীপত্র ::::

বঙ্গভাষা

হে বঙ্গ, ভাণ্ডারে তব বিবিধ রতন;—
তা সবে, (অবোধ আমি!) অবহেলা করি,
পর-ধন-লোভে মত্ত, করিনু ভ্রমণ
পরদেশ, ভিক্ষাবৃত্তি কুক্ষণে আচরি
কাটাইনু বহু দিন সুখ পরিহরি !
অনিদ্রায়, অনাহারে সঁপি কায়, মনঃ,
মজিনু বিফল তপে অবরেণ্যে বরি;—
কেলিনু শৈবালে; ভুলি কমল-কানন !
স্বপ্নে তব কুললক্ষ্মী কয়ে দিলা পরে
ওরে বাছা মাতৃ-কোষে রতনের রাজি,
এ ভিখারী-দশা তবে কেন তোর আজি ?
যা ফিরি, অজ্ঞান তুই, যা রে ফিরি ঘরে!
পালিলাম আজ্ঞা সুখে; পাইলাম কালে
মাতৃ-ভাষা-রূপ খনি, পূর্ণ মণিজালে।।


8

কমলে কামিনী


কমলে কামিনী আমি হেরিনু স্বপনে
কালিদহে বসি বামা শতদল-দলে
(নিশীথে চন্দ্রিমা যথা সরসীর জলে
মনোহরা) বাম করে সাপটি হেলনে
গজেশে, গ্রাসিছে তারে উগরি সঘনে
গুঞ্জরিছে অলিপুঞ্জ অন্ধ পরিমলে,
বহিছে দহের বারি মৃদু কলকলে
কার না ভোলে রে মনঃ এ হেন ছলনে !
কবিতা-পঙ্কজ-রবি, শ্রীকবিকঙ্কণ,
ধন্য তুমি বঙ্গভূমে ! যশঃ-সুধাদানে
অমর করিলা তোমা অমরকারিণী
বাগ্দেবী ! ভোগিলা দুখ জীবনে, ব্রাহ্মণ,
এবে কে না পূজে তোমা,মজি তব গানে?—
বঙ্গ-হৃদ-হ্রদে চণ্ডী কমলে কামিনী।।

১. কবিকঙ্কন মুকুন্দরাম চক্রবর্তী অন্যতম শ্রেষ্ঠ বাঙালী কবি। তাঁর রচিত মঙ্‌লকাব্য কবিকঙ্কণ-চণ্ডীতে যে কমলে কামিনীর চিত্র অঙ্কিত হয়েছে মধুসূধন তাঁর সনেটে তাই উপকরণরূপে গ্রহন করেছেন।

সূত্র : মধুসূদন রচনাবলী-সব্যসাচী রায় (সম্পাদনায়)