:::: সূচীপত্র ::::

অন্নপূর্ণার ঝাঁপি 

মোহিনী-রূপসী-বেশে ঝাঁপি কাঁখে করি,
পশিছেন, ভবানন্দ, দেখ তব ঘরে
অন্নদা ! বহিছে শূন্যে সঙ্গীত-লহরী,
অদৃশ্যে অপ্সরাচয় নাচিছে অম্বরে।
দেবীর প্রসাদে তোমা রাজপদে বরি,
রাজাসন, রাজছত্র, দিবেন সত্বরে
রাজলক্ষ্মী, ধন-স্রোতে তব ভাগ্যতরি
ভাসিবে অনেক দিন, জননীর বরে
কিন্তু চিরস্থায়ী অর্থ নহে এ সংসারে;
চঞ্চলা ধনদা রমা, ধনও চঞ্চল;
তবু কি সংশয় তব জিজ্ঞাসি তোমারে?
তব বংশ-যশঃ-ঝাঁপিঅন্নদামঙ্গল
যতনে রাখিবে বঙ্গ মনের ভাণ্ডারে,
রাখে যথা সুধামৃতে চন্দ্রের মণ্ডলে৷

কাশীরাম দাস 

চন্দ্রচূড় জটাজালে আছিলা যেমতি
জাহ্নবী, ভারত-রস ঋষি দ্বৈপায়ন,
ঢালি সংস্কৃত-হ্রদে রাখিলা তেমতি;
তৃষ্ণায় আকুল বঙ্গ করিত রোদন
কঠোরে গঙ্গায় পূজি ভগীরথ ব্ৰতী,
(সুধন্য তাপস ভবে, নর-কুল-ধন !)
সগর-বংশের যথা সাধিলা মুকতি,
পবিত্ৰিলা আনি মায়ে, এ তিন ভুবন;
সেই রূপে ভাষা-পথ খননি স্ববলে,
ভারত-রসের স্রোতঃ আনিয়াছ তুমি
জুড়াতে গৌড়ের তৃষা সে বিমল জলে!
নারিবে শোধিতে ধার কভু গৌড়ভূমি
মহাভারতের কথা অমৃত-সমান
হে কাশি, কবীশদলে তুমি পুণ্যবান্‌ 


কৃত্তিবাস

জনক জননী তব দিলা শুভ ক্ষণে
কৃত্তিবাস নাম তোমা !কীৰ্ত্তির বসতি
সতত তোমার নামে সুবঙ্গ-ভবনে,
কোকিলের কণ্ঠে যথা স্বর, কবিপতি,
নয়নরঞ্জন-রূপ কুসুম যৌবনে,
রশ্মি মাণিকের দেহে ! আপনি ভারতী,
বুঝি কয়ে দিলা নাম নিশার স্বপনে,
পূর্ব্ব-জনমের তব স্মরি হে ভকতি !
পবন-নন্দন হনু, লঙ্ঘি ভীমবলে
সাগর, ঢালিয়া যথা রাঘবের কানে
সীতার বারতা-রূপ সঙ্গীত-লহরী;
তেমতি, যশস্বি, তুমি সুবঙ্গ-মণ্ডলে
গাও গো রামের নাম সুমধুর তানে,
কবি-পিতা বাল্মীকিকে তপে তুষ্ট করি !

১. রায়গুণাকর কবি ভারতচন্দ্র রায় অন্নদামঙ্গল কাব্য রচয়িতা। ইনি অষ্টাদম শতকের বাঙালী কবি।
২. চন্দ্র চূড়ায় যার মহাদেব।
৩. গঙ্গার অপর নাম। ভগীরথের গঙ্গা আনয়নের পৌরাণিক বৃত্তান্ত।
৪. অশোককাননে বন্দিনী সীতার বার্তা এনেছিল হনুমান।

সূত্র : মধুসূদন রচনাবলী-সব্যসাচী রায় (সম্পাদনায়)