কালিদাস
কবিতা-নিকুঞ্জে তুমি পিককুল-পতি !
কার গো না মজে মনঃ ও মধুর স্বরে ?
শুনিয়াছি লোক-মুখে আপনি ভারতী,
সৃজি মায়াবলে সরঃ বনের ভিতরে,
নব নাগরীর বেশে তুষিলেন বরে
তোমায়;১ অমৃত রসে রসনা সিকতি,
আপনার স্বর্ণ বীণা অরপিলা করে !—
মিথ্যা বা কি বলে বলি ! শৈলেন্দ্র-সদনে,
লভি জন্ম মন্দাকিনী (আনন্দ জগতে !)
নাশেন কলুষ যথা এ তিন ভুবনে,
সঙ্গীত-তরঙ্গ তব উথলি ভারতে
(পুণ্যভূমি !) হে কবীন্দ্র, সুধা-বরিষণে,
দেশ-দেশান্তরে কর্ণ তোষে সেই মতে।
১০
মেঘদূত
কামী যক্ষ দগ্ধ, মেঘ, বিরহ-দহনে,
দূত-পদে বরি পূর্ব্বে, তোমায় সাধিল
বহিতে বারতা তার অলকা-ভবনে,
বহিতে বারতা তার অলকা-ভবনে,
যেখানে বিরহে প্রিয়া ক্ষুন্ন মনে ছিল।
কত যে মিনতি কথা কাতরে কহিল
তব, পদতলে সে, তা পড়ে কি হে মনে ?
জানি আমি, তুষ্ট হয়ে তার সে সাধনে
প্রদানিলা তুমি তারে যা কিছু যাচিল;
তেঁই গো প্রবাসে আজি এই ভিক্ষা করি;—
দাসের বারতা লয়ে যাও শীঘ্ৰগতি
বিরাজে, হে মেঘরাজ, যথা সে যুবতী,
অধীর এ হিয়া হায়, যার রূপ স্মরি !
কুসুমের কানে স্বনে মলয় যেমতি
মৃদু নাদে, কয়ো তারে, এ বিরহে মরি !
মৃদু নাদে, কয়ো তারে, এ বিরহে মরি !
২
গরুড়ের বেগে,মেঘ, উড় শুভক্ষণে !
সাগরের জলে সুখে দেখিবে, সুমতি,
ইন্দ্র-ধনুঃ-চূড়া শিরে ও শ্যাম মূরতি,
ব্ৰজে যথা ব্রজরাজ যমুনা-দর্পণে
হেরেন বরাঙ্গ যাহে মজি ব্রজাঙ্গনে
দেয় জলাঞ্জলি লাজে ! যদি রোধে গতি
তোমার, পর্ব্বত-বৃন্দ, মন্দ্রি ভীম স্বনে
বারি-ধারা-রূপে বাণে বিঁধো, মেঘপতি,
তা সকলে, বীর তুমি ; কারে ডর রণে ?
এ দূর গমনে যদি হও ক্লান্ত কভু,
কামীর দোহাই দিয়া ডেকো গো পবনে
বহিতে তোমার ভার। শোভিবে, হে প্ৰভু,
খগেন্দ্র২ উপেন্দ্র৩-সম, তুমি সে বাহনে !—
কৌস্তুভের রূপে পরো— তড়িত-রতনে ৷৷
১.
কালিদাসের কবিত্বলাভ বিষয়ে প্রচলিত কিম্বদন্তীর প্রসঙ্গ।
২.
পক্ষীদের রাজা গরুড়।
৩.
বিষ্ণু।