১২
বউ কথা কও
কি দুখে, হে পাখি, তুমি শাখার উপরে
বসি, বউ কথা কও, কও এ কাননে ?—
মানিনী ভামিনী১ কি হে, ভামের গুমরে,
পাখা-রূপ ঘোমটায় ঢেকেছে বদনে ?
তেঁই সাধ তারে তুমি মিনতি-বচনে ?
তেঁই হে এ কথাগুলি কহিছ কাতরে ?
নর-নারী-রঙ্গ কি হে বিহঙ্গিনী করে ?
সত্য যদি, তবে শুন, দিতেছি যুকতি;
(শিখাইব শিখেছি যা ঠেকি এ কু-দায়ে)
পবনের বেগে যাও যথায় যুবতী;
“ক্ষম, প্রিয়ে” এই বলি পড় গিয়া পায়ে !—
কভু দাস, কভু প্রভু, শুন, ক্ষুন্ন-মতি,
প্রেম-রাজ্যে রাজাসন থাকে এ উপায়ে।।
১৩
পরিচয়
যে দেশে উদয়ি রবি উদয়-অচলে,
ধরণীর বিম্বাধর চুম্বেন আদরে
প্রভাতে ; যে দেশে গেয়ে, সুমধুর কলে,
ধাতার প্রশংসা-গীত, বহেন সাগরে
জাহ্নবী ; যে দেশে ভেদি বারিদ২-মণ্ডলে
(তুষারে বপিত বাস উর্দ্ধ্ব কলেবরে,
রজতের উপবীত স্রোতঃ-রূপে গলে,)
শোভেন শৈলেন্দ্র-রাজ, মান-সরোবরে৩
(স্বচ্ছ দরপণ!) হেরি ভীষণ মূরতি ;—
যে দেশে কুহরে পিক বাসন্ত কাননে ;
দিনেশে যে দেশে সেবে নলিনী যুবতী ;—
চাঁদের আমোদ যথা কুমুদ-সদনে ; —
সে দেশে জনম মম ; জননী ভারতী ;
তেঁই প্রেম-দাস আমি, ওলো বরাঙ্গনে !
১8
কুসুমের দাস যথা মারুত, সুন্দরি,
ভাল যে বাসিব আমি, এ বিষয়ে তবে
এ বৃথা সংশয় কেন ? কুসুম-মঞ্জরী
মদনের কুঞ্জে তুমি। কভু পিক-রবে
তব গুণ গায় কবি ; কভু রূপ ধরি ।
অলির, যাচে সে মধু ও কানে গুঞ্জরি,
ব্ৰজে যথা রসরাজ রাসের পরবে !৪
কামের নিকুঞ্জে, এই ! কত যে কি ফলে,
হে রসিক, এ নিকুঞ্জ, ভাবি দেখ মনে !
সরঃ ত্যজি সরোজিনী ফুটিছে এ স্থলে,
কদম্ব, বিম্বিকা, রম্ভা, চম্পকের সনে !
সাপিনীরে
হেরি ভয়ে লুকাইছে গলে
কোকিল; কুরঙ্গ গেছে রাখি দু-নয়নে!৫
১৫
যশের মন্দির
সুবর্ণ দেউল আমি দেখিনু স্বপনে
অতি-তুঙ্গ শৃঙ্গ শিরে ! সে শৃঙ্গের তলে,
বড় অপ্রশস্ত সিঁড়ি গড়া মায়া-বলে,
বহুবিধ রোধে রুদ্ধ৬ উৰ্দ্ধগামী জনে !
তবুও উঠিতে তথা—সে দুর্গম স্থলে —
করিছে কঠোর চেষ্টা কষ্ট সহি মনে
বহু প্রাণী। বহু প্রাণী কাঁদিছে বিকলে,
না পারি লভিতে যত্নে সে রত্ন-ভবনে।
ব্যথিল হৃদয় মোর দেখি তা সবারে ।—
শিয়রে দাঁড়ায়ে পরে কহিলা ভারতী,
মৃদু হাসি ; “ওরে বাছা, না দিলে শকতি
আমি, ও দেউলে কার সাধ্য উঠিবারে ?
যশের মন্দির ওই ; ওথা যার গতি,
অশক্ত আপনি যম ছুঁইতে রে তারে !”
১.
কোপনস্বভাবা রমণী।
২.
মেঘ।
৩.
মানস সরোবর।
৪.
রাধাকৃষ্ণের ব্রজলীলার প্রসঙ্গ।
৫.
দু’নয়নে হরিণের
চোখ।
৬.
প্রতিবন্ধকের দ্বারা বাধাযুক্ত।