:::: সূচীপত্র ::::

১৬

বি

কে কবিকবে কে মোরে? ঘটকালি করি,
শবদে শবদে বিয়া দেয় যেই জন,
সেই কি সে যম-দমী? তার শিরোপরি
শোভে কি অক্ষয় শোভা যশের রতন ?
সেই কবি মোর মতে, কল্পনা সুন্দরী
যার মনঃ-কমলেতে পাতেন আসন,
অস্তগামি-ভানু-প্রভা-সদৃশ বিতরি
ভাবের সংসারে তার সুবর্ণ-কিরণ
আনন্দ আক্ষেপ, ক্রোধ, যার আজ্ঞা মানে
অরণ্যে কুসুম ফোটে যার ইচ্ছা-বলে ;
নন্দন-কানন হতে যে সুজন আনে
পারিজাত কুসুমের রম্য পরিমলে;
মরুভূমেতুষ্ট হয়ে যাহার ধেয়ানে
বহে জলবতী নদী মৃদু কলকলে !

১৭

দে-দোল

ওই যে শুনিছ ধ্বনি নিকুঞ্জ-বনে,
ভেবো না গুঞ্জরে অলি চুম্বি ফুলাধরে ;
ভেবো না গাইছে পিক কল কুহরণে,
তুষিতে প্রত্যূষে আজি ঋতু-রাজেশ্বরে !
দেখ, মীলি, ভক্ত জন, ভক্তির নয়নে,
অধোগামী দেব-গ্রাম উজ্জ্বল-অম্বরে,
আসিছেন সবে হেথাএই দোলাসনে
পূজিতে রাখালরাজরাধা-মনোহরে !
স্বর্গীয় বাজনা ওই ! পিককুল কবে,
কবে বা মধুপ, করে হেন মধু-ধ্বনি ?
কিন্নরের বীনা-তান অপ্সরার রবে !
নন্দে কুসুম-সাজ ধরেন ধরণী,
নন্দন-কানন-জাত পরিমল ভবে
বিতরেন বায়ু-ইন্দ্র পবন আপনি !

১৮

শ্রীপঞ্চমী


নহে দিন দূরে, দেবি যবে ভূভারতে
বিসর্জ্জিব ভূভারত, বিস্মৃতির জলে,
ও তব ধবল মূর্ত্তি সুদল কমলে ;
কিন্তু চিরস্থায়ী পূজা তোমার জগতে !
মনোরূপ-পদ্ম যিনি রোপিলা কৌশলে
এ মানব-দেহ-সরে, তাঁর ইচ্ছামতে
সে কুসুমে বাস তব, যথা মরকতে
কিম্বা পদ্মরাগে জ্যোতিঃ নিত্য ঝলঝলে !
কবির হৃদয়-বনে যে ফুল ফুটিবে,
সে ফুল-অঞ্জলি লোক রাঙা চরণে
পরম-ভকতি-ভাবে চিরকাল দিবে
দশ দিশে, যত দিন মর ভবনে
মনঃ-পদ্ম ফোটে, পূজা, তুমি, মা, পাইবে !
কি কাজ মাটির দেহে তবে, সনাতনে ?

১৯

কবিতা


অন্ধ যে, কি রূপ কবে তার চক্ষে ধরে
নলিনী ? রোধিলা বিধি কৰ্ণ-পথ যার,
লভে কি সে সুখ কভু বীণার সুস্বরে ?
কি কাক, কি পিকধ্বনি,সম-ভাব তার !
মনের উদ্যান-মাঝে, কুসুমের সার
কবিতা-কুসুম-রত্ন !দয়া করি নরে,
কবি-মুখ-ব্রহ্ম-লোকে রি অবতার
বাণীরূপে বীণাপাণি নর-নগরে
দুৰ্ম্মতি সে জন, যার মনঃ নাহি মজে
কবিতা-অমৃত-রসে ! হায়, সে দুৰ্ম্মতি,
পুষ্পাঞ্জলি দিয়া সদা যে জন না ভজে
চরণপদ্ম, পদ্মবাসিনি ভারতি !
কর পরিমলময় হিয়া-সরোজে
তুষি যেন বিজ্ঞে, মা গো, মোর মিনতি

১. উল্মীলিত করে।
২. বায়ুদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ।

সূত্র : মধুসূদন রচনাবলী-সব্যসাচী রায় (সম্পাদনায়)