২০
আশ্বিন মাস
সু-শ্যামাঙ্গ বঙ্গ এবে মহাব্ৰতে রত।
এসেছেন ফিরে উমা, বৎসরের পরে,
মহিষমর্দ্দিনীরূপে
ভকতের ঘরে ;
বামে কমলকায়া
রমা, দক্ষিণে আয়ত—
লোচনা
বচনেশ্বরী১ স্বর্ণবীণা করে ;
শিখিপৃষ্ঠে
শিখিধ্বজ, যাঁর শরে হত
তারক—অসুরশ্রেষ্ঠ ; গণ-দল যত,
করি-শিরঃ ;—আদিব্রহ্ম বেদের বচনে।
এক পদ্মে শতদল ! শত রূপবতী
নক্ষত্রমণ্ডলী যেন একত্রে গগনে !
কি আনন্দ। পূৰ্ব্ব কথা কেন কয়ে, স্মতি,
আনিছ হে বারি-ধারা আজি এ নয়নে ?—
ফলিবে কি মনে পুনঃ সে পূৰ্ব্ব ভকতি ?
২১
সায়ংকাল
চেয়ে দেখ, চলিছেন মৃদে২ অস্তাচলে
দিনেশ, ছড়ায়ে স্বর্ণ, রত্ম রাশি রাশি
আকাশে। কত বা যত্নে কাদম্বিনী আসি
ধরিতেছে তা
সবারে সুনীল
আঁচলে ! —
কে না জানে অলঙ্কারে অঙ্গনা বিলাসী ?
অতি-ত্বরা গড়ি ধনী দৈব-মায়া-বলে
বহুবিধ অলঙ্কার পরিবে লো হাসি,
কনক-কঙ্কণ হাতে, স্বর্ণ-মালা গলে !
সাজাইবে গজ, বাজী ; পৰ্ব্বতের শিরে
সুবর্ণ কিরীট দিবে ; বহাবে অম্বরে
নদস্রোতঃ উজ্জ্বলিত স্বর্ণবর্ণ নীরে !
সুবর্ণের গাছ রোপি, শাখার উপরে
হেমাঙ্গ বিহঙ্গ থোবে !— এ বাজী করি রে
শুভ ক্ষণে দিনকর কর-দান করে !
২২
সায়ংকালের তারা
কার সাথে তুলনিবে, লো সুর-সুন্দরি,
ও রূপের ছটা কবি এ ভব-মণ্ডলে ?
আছে কি লো হেন খনি, যার গর্ভে ফলে
রতন তোমার মত, কহ, সহচরি
গোধূলির ? কি ফণিনী, যার সু-কবরী
সাজায় সে তোমা সম মণির উজ্জ্বলে ?—
ক্ষণমাত্র দেখি তোমা নক্ষত্ৰ-মণ্ডলে
কি হেতু ? ভাল কি তোমা বাসে না শর্ব্বরী?
হেরি অপরূপ রূপ বুঝি ক্ষুন্ন মনে
মানিনী রজনী রাণী, তেঁই অনাদরে
না দেয় শোভিতে তোমা সখীদল-সনে,
যবে কেলি করে তারা সুহাস-অম্বরে ?
কিন্তু কি অভাব তব, ওলো বরাঙ্গনে,—
ক্ষণমাত্র দেখি মুখ, চির আঁখি স্মরে !
২৩
নিশা
বসন্তে কুসুম-কুল যথা বনস্থলে,
চেয়ে দেখ, তারাচয় ফুটিছে গগনে,
মৃগাক্ষি !— সুহাস-মুখে সরসীর জলে,
চন্দ্রিমা করিছে কেলি প্রেমানন্দ-মনে ।
কত যে কি কহিতেছে মধুর স্বননে
পবন— বনের কবি, ফুল্ল ফুল-দলে,
বুঝিতে কি পার, প্রিয়ে ? নারিবে কেমনে,
প্ৰেম-ফুলেশ্বরী তুমি প্রমদা-মণ্ডলে৩ ?
এ হৃদয়, দেখ, এবে ওই সরোবরে,—
চন্দ্রিমার রূপে এতে তোমার মূরতি !
কাল বলি অবহেলা, প্রেয়সি, যে করে
নিশায়, আমার মতে সে বড় দুৰ্ম্মতি ।
হেন সুবাসিত শ্বাস, হাস স্নিগ্ধ করে
যার, সে কি কভু মন্দ, ওলো রসবতি?
১.
বাগ্দেবী সরস্বতী।
২.
ধীরে ধীরে।
৩.
নারীমণ্ডলীতে।