:::: সূচীপত্র ::::

অভিব্যক্তিবাদ

: 'প্রকাশবাদ'ও বলা হয়। ইংরেজি 'একস্‌প্রেশনিজ্‌ম'। দৃশ্যশিল্পে ও সাহিত্যে বাস্তববাদের চরম বিরোধী এক প্রকাশভঙ্গি। শব্দটি সম্ভবত প্রথম ব্যবহার করেছিলেন ভকস্-এল্। জুলিয়ঁ-অগস্ত হ্যারভের আঁকা একগুচ্ছ চিত্রের শিরনামা ছিল 'একস্‌প্রেশনিজ্‌ম' (Expressionismes) । এই নাম থেকেই শব্দটির উৎপত্তি। ১৯১০ থেকে ১৯২৪ সালের মধ্যে জার্মানিতে চিত্রশিল্পে, নাটকে, কাব্যে, চলচ্চিত্রে এই অভিব্যক্তিবাদের প্রকাশ লক্ষ করা যায়। অস্‌কার কোকোশ্‌কা, কান্দিনস্কি, প্রমুখ অভিব্যক্তিবাদী শিল্পীরা ভ্যান গখ, পোল্ গগাঁ এবং এডওয়ার্ড মান্‌খ্‌ (Munch) দ্বারা প্রভাবিত হয়ে তাঁদের শিল্পকর্মে অভিব্যক্তিবাদী প্রকাশভঙ্গি ব্যবহার করেন-যেমন দৃঢ় কৌণিক লাইনের ব্যবহার, অস্বাভাবিক রঙের প্রয়োগ ইত্যাদি। উদ্দেশ্য বাস্তব জগতের অভিনব প্রতিচিত্রণ।

অভিব্যক্তিবাদী নাটক বস্তুর বাহ্যরূপের অন্তরালে যে-রূপ আছে, সেই রূপ অভিব্যক্ত করে। চরিত্রের প্রতিক্ষণের আন্তর ভাবনা এবং দেহমনের অনুভূতির সাংকেতিক প্রকাশ করাই অভিব্যক্তিবাদী নাটকের উদ্দেশ্য। অভিব্যক্তিবাদের সঙ্গে প্রায় সমসাময়িককালে উদ্ভূত ভবিষ্যবাদের (ফিউচারিজম) সাদৃশ্য দেখা যায়। এর সঙ্গে অধিবাস্তববাদেরও (সুররিয়লিজম) কিছু মিল আছে। স্ট্রিন্ডবাগের 'দ্য ড্রিম প্লে' এবং 'দ্য গোস্ট সোনোটা' বিখ্যাত অভিব্যক্তিবাদী নাটক। আমেরিকান নাট্যকার ইউজিন ও'নিল-এর অভিব্যক্তিবাদী নাটক 'দ্য হেয়ারি এপ' এবং 'ল্যাজারাস লাফ্‌স' ও বিশেষ উল্লেখযোগ্য। অভিব্যক্তিবাদী নাট্যকার হিসাবে কাইজার এবং টলার-ও বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেন। বাংলায় রবীন্দ্রনাথের 'তাসের দেশ' নৃত্যনাট্য, প্রতাপচন্দ্র চন্দ্রের 'আজব দেশ' নাটকে অভিব্যক্তিবাদের উপাদান পাওয়া যায়।

প্রাচ্যে অভিব্যক্তিবাদের অর্থ সম্পূর্ণ ভিন্ন। আচার্য অভিনব গুপ্তের রস সম্পর্কিত সিদ্ধান্তকে অভিব্যক্তিবাদ বলা হয়। অভিনব গুপ্তের মতে আনন্দ রূপ আত্মার অভিব্যক্তিই সাহিত্যের প্রধান উদ্দেশ্য এবং যে উপায়ে আত্মা অভিব্যক্ত হয় তাকে ধ্বনিবাদীরা বলেন ব্যঞ্জনা।

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন