অমিত্রাক্ষর ছন্দ
: অমিল প্রবহমান পয়ারও বলা হয়। ইংরেজিতে 'ব্ল্যাংক ভার্স' (Blank verse) ইংরেজিতে এটি হল 'আয়াম্বিক পেন্টামিটার'-এ (iambic pentametre) অর্থাৎ ঝোঁক-না-দেওয়া
এবং ঝোঁক দেওয়া দল বিশিষ্ট পাঁচটি পর্ব (ফুট)-ওয়ালা ছত্র রচিত মিলহীন কবিতাশরীর। এতে বাক্যের স্বাভাবিক
ছন্দ নমনীয় ভাবে বিধৃত হয়। মসৃণ প্রবহমানতা' (enjambment) এই ছন্দের আর একটি বৈশিষ্ট্য। ইংল্যান্ডে ১৫৪০ সাল নাগাদ ভার্জিল-এর অনুবাদ করার সময় এই
ছন্দ প্রথম ব্যবহার করেন আল অব্ সারে (Earl of Surrey)। পরবর্তীকালে অনেক নাট্যকার সাহিত্যিকই এই
ছন্দ ব্যবহার করেছেন যেমন শেক্সপিয়র, মিল্টন,
ওয়ার্ডসওয়ার্থ, টেনিসন প্রমুখ। কাব্যনাটকে এটি একটি
প্রচলিত মাধ্যম। এটি মুক্তছন্দ (free verse) থেকে আলাদা কারণ এতে
দলসংস্থানের বিশেষ বিন্যাস বা মিটার ব্যবহার করা হয়, মুক্তছন্দে সেটি করা হয় না। এই ছন্দে প্রতি চরণের মাত্রাসংখ্যা চতুর্দশ এবং দুই পর্বে মাত্রাবিন্যাসের
রীতি ৮+৬। কিন্তু এখানে পয়ারের মতো চরণান্তিক মিল রক্ষা করা হয় না এবং ছেদ ও যতিকে বিচ্ছিন্ন
করে দিয়ে পূর্ণযতি স্থাপনেও যথেষ্ট স্বাধীনতা গ্রহণ করা হয়। অমিত্ৰাক্ষর ছন্দে প্রতি চরণের শেষে পূর্ণ
যতিপাত বাধ্যতামূলক নয়। মাইকেল মধুসূদন এই ছন্দেই 'তিলোত্তমাসম্ভব', 'মেঘনাদবধ' ও 'বীরাঙ্গনা' কাব্য রচনা করেন।
[ 'সম্মুখ সমরে পড়ি বীরচূড়ামনি। বীরবাহু চলি যবে গেলা যমপুরে অকালে; কহ হে দেবি অমৃত ভাষিণী, -কোন বীর বরে বরি সেনাপতি
পদে পাঠাইলা রণে—পুনঃ রক্ষকুলনিধি রাঘবারি।
অথবা,
'এইরূপে আক্ষেপিয়া রাক্ষস্ ঈশ্বর রাবণ, ফিরায়ে আঁখি, দেখিলেন দূরে সাগর মকরালয়। মেঘশ্রেণী যেন আচল,
ভাসিছে জলে শিলাকুল, বাঁধা দৃঢ় বাঁধে' ]।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন