ভাদ্রের শেষের সুন্দর রাত্রি। চাঁদের আলোয় ধরণী শুভ্ৰবেশ ধরেছে। গ্যাসের আলো আর জ্যোৎস্নার পাল্লা চলছে—কার কতদূর শক্তি পরখ হবে। এমন রাতে ঘুমুতে কার ইচ্ছা করে। বিশেষ করে যদি জানলা দিয়ে এক টুকরো চাঁদের আলো মুখের ওপরে এসে পড়ে। এমন অবস্থায় দেহমনে আনন্দ-শিহরণ এবং পুলক-স্পন্দন অনুভূত হওয়া খুবই স্বাভাবিক।
বাইরেই বোধ করি ভালো লাগবে। মিস হাসিনা শয্যা ছেড়ে দিল। পোড়া চোখকে গাল দিলে আর কি হবে! প্রকৃতিই যে আজ তার সাথে ফ্লার্ট করার জন্যে অনুপম সাজে সেজেছে। ভরা যৌবন-কালে এমনি করে প্ররোচিত হলে সবাই ফ্লার্ট করবে—কেবল তার দোষ কি ?
আস্তে আস্তে দুয়োর খুললো সে— মা যেন টের না পান। পাশের ঘরে তিনি।
তিন তলার উপরে তাদের তিনটি ঘর। উত্তর-দক্ষিণে বাড়ী। উত্তর দিকের ফ্লাটটা তাদের। দক্ষিণ দিকে আর একটি ফ্লাট। সেটার সামনে খানিকটা ফাঁকা জায়গা আছে। সেখানে গিয়ে সে দাঁড়ালো।
এই যে চমৎকার শিশির-স্নাত জোৎস্নাপুলকিত রাত্রি প্রতিদিন চলে যায়—অথচ তার ক্ষুধিত চক্ষু দেখতে পায় না, এর চাইতে আফসোস এবং লজ্জা আর কি হতে পারে। বঞ্চিত করে তাকে তার ভরা যৌবন আর উপরওয়ালাদের শাসন। দেহের ভয়ে বেরোয়নি । এতদিন। দেহভোগেই বা অন্যায়টা কি, তার মনে হয় ! আজ ধরণী নিজেই তো ভোগ করা পরিপূর্ণরূপে আপনাকে : স্রষ্টা ভোগ করছেন পরিপূর্ণরূপে তাঁর সৃষ্টিকে।
আজ সে সব বন্ধন টুটবে। ক্ষিধেয় কাতর থাকার চেয়ে খেয়ে পেটের অসুখে ভোগা অনেক ভালো। শরতের পরে আসে গাঢ় কুয়াশাপূর্ণ শীতের রাত্রি। শরৎ তবু কাম্য—একান্ত কাম্য।
সে আজ সত্যি ক্ষেপে উঠবে।
ওদিকের ব্লকে থাকে আর একটি ছেলে। নওশা তার নাম। বেশ রোমান্টিক নাম। ছেলেটি অনেক দিন তার সাথে আলাপ করতে চেষ্টা করেছে। সে এতটুকু আস্কারা দেয় নি— যৌবনের, দেহের ভয়ে। নওশা...বেশ নামটি ...আঃ।
ওদিকের ব্লকে থাকে আর একটি ছেলে। নওশা তার নাম। বেশ রোমান্টিক নাম। ছেলেটি অনেক দিন তার সাথে আলাপ করতে চেষ্টা করেছে। সে এতটুকু আস্কারা দেয় নি— যৌবনের, দেহের ভয়ে। নওশা...বেশ নামটি ...আঃ।
তার অত্যধিক রুক্ষতায় নওশার চোখের পাতা কত দিন ভিজে ওঠেছে। নওশা ! মধুমাখানো নাম ! ওকে ব্যথা দেওয়া উচিত হয় নি। অমন কোমল গাল দু’টি, হরিণের মতো চোখ, নরম আঙ্গুলের ডগা, ফর্সা শরীরের রঙ আর গাঢ় কালো ঢেউ খেলানো চুল—তাকে সে প্রত্যাখ্যান করলো কেন ? ফুলকে মোচড়ে দেয় যে, সে পশু নয়ত কি ? না, আজ সে এর প্রতিশোধ নেবে।
ঐ ত নওশার ঘর। অর্ধোন্মুক্ত জানলা দিয়ে ওর মুখটি এবং চুলগুলো দেখা যাচ্ছে। কি সুন্দর। জানলা দিয়ে চাঁদের আলো ফুলশরের মতো তা বাঁ দিককার এক চতুর্থাংশ চুল ও শ্মশ্ৰুবিহীন তুলতুলে গালের ওপর পড়ছে। সূর্যের আলোয় যেমন চাঁদ হলো চাঁদ, ওর ঐ গালটিও চাঁদের আলোয় হলো সত্যি আর একটি চাঁদ। জুলফি এবং উঠি উঠি করা নরম দাড়ি (ঠিক পশমের মতো) অর্ধেক গাল পর্যন্ত এসে ঠেকেছে। দেখার বস্তু বটে ! কোন একটি উর্দু গানের প্রথম পদটি সে আবৃত্তি করলো অস্তে আস্তে সুর করেই। সেই পদটি হলো, দামে ঘেঁছু মে ফাঁছা হ্যায় দেল। অর্থাৎ (হে প্রিয়) তোমার ঐ অর্ধেক গাল পর্যন্ত উঠি-উঠি-করা দাড়ির জুলফি তার মধ্যে প্রাণ আমার বাঁধা পড়েছে।
তার মনে হলো বাঙ্গালী কবির প্রেমের কবিতা লিখতেই জানে না। যাও কিছু লেখে, সেগুলো হয়ে ওঠে ইংরেজি কবিতার অনুকরণ, না হয় অনুরূপা দেবীর উপন্যাসের মতো অসহ্য দীর্ঘ মরাকাঁদুনি।
না, আর দেরি নয়। আজকের রোমান্সকে সে কিছুতেই মাটি হতে দেবে না।
নওশার দক্ষিণ-দুয়ারি ঘরটি খোলাই আছে। হাসিনা আস্তে আস্তে ঢুকলো। কী করে জাগানো যায় ওকে ! হাত দিয়ে ঠেলে ! হয়ত ভয় পাবে | ডেকে ! সেও হয় না, কারণ পাশের ঘরগুলোতে অনেকগুলো কান আছে। সম্প্রতি যদিও সেগুলো অকৰ্মণ্য, কিন্তু অতি সামান্য কারণেই তার মধ্যে অন্ততঃ দু’চারটা জেগে উঠতে পারে। তা হলে সব মাটি।
চুমো দিয়ে জাগানো যাক। একটা কিংবা দুটো চুমো—গালে কিংবা ঠোটে। তাতে সেও উঠবে জেগে ঠিক ভোরের সূর্যের মতো ধীরে ধীরে চোখ মেলে, আর সে নিজেও এমন একটি রোমান্সের আস্বাদন করবে— যা ইতিপূর্বে কোন মেয়ের ভাগ্যে, অন্ততঃ অবিবাহিত কুমারী মেয়ের ভাগ্যে কদাচিৎ ঘটেছে। বিশেষ কিছু সে আর ভাবলো না। আস্তে আস্তে মুখটি নত করে নওশার অধরযুগলের বাঁ পাশটায় বেশ গাঢ় করে একটি আবেশপূর্ণ চুমো বসিয়ে দিলো, আর কানের কাছে মুখ নিয়ে বললো : ওঠো প্রিয় ওঠো, জাগো শ্যামল, জাগো : এমন একটি নিশি মাটি করো না। ঠিক যেন ওমর খৈয়ামের কবিতা আর কি !
নওশার নিদ্রাবিজড়িত চোখ দুটি খুলে গেলো। যা তার দৃষ্টিতে পড়লো, তা কি সে বিশ্বাস করবে ? না, অন্য কিছু ভেবে চিৎকার করবে? তার চিনতে দেরি হতে লাগলো। আস্তে আস্তে শুধালো, কে তুমি ?
কে তুমি ? কি নিষ্ঠুর তোমার জিজ্ঞাসা চিনতে পারছ না ? আমি ঐ ঘরের হাসিনা— যার সঙ্গে তুমি কথা কইতে চেয়েছ কত দিন। যার জন্যে তোমার আঁখি ছলছলিয়ে উঠেছে কত দিন। দিনের রুক্ষ হাসিনা রাত্তিরে এসেছে সত্যি হাসিনা হয়ে ওঠে প্রিয়, ওঠো।
নওশা উঠে বসলো। এমন কোমল একটি মেয়ে-ইতিপূর্বে কেউ স্পর্শ করে নি এমন একটি মেয়ে তাকে আজ রাত্তিরে এমন করে ধরা দেবে, তার দিবসের কান্না এমনি সুফলপ্ৰসূ হবে, শোবার সময় কি সে এ কথা ভেবেছে ! শাস্ত্রগ্রন্থের এক জায়গায় আছে, পুণ্যাত্মাদের জন্যে বেহেশতে এমন সুন্দর নাতিদীর্ঘ অন্সরী মিলবে যাদের ইতিপূর্বে কোন মানব কিংব জেন স্পর্শ করে নি। আল্লাহ দয়া করে তার জন্যে মর্তেই সেই বেহেশত এনে দিলেন নাকি ?
সে বললো : আজ যে হঠাৎ এমনি করে এসে আমায় ধন্য করবে আমি ভাবতে পারি নি হাসিনা। কত দিন তোমার সাথে দুটো কথা বলবো এ আশা করে বারান্দায় তুমি যেখানে বিকেলে কলেজ থেকে এসে দাঁড়াও, তার পাশে দাঁড়িয়েছি, কিন্তু তুমি একটু সাড়া দেবে দূরে থাক, মুখ গভীর করে ধীরমন্থর গতিতে পালিয়েছ। আর শুনেছি, যেতে যেতে গজগজ করেছ—হয়ত আমার বেহায়াপনাকে উদ্দেশ করেই! ভালোবাসা একটা বাহুল্য জিনিস। তার পূর্বে নারী ও পুরুষ যে জিনিসটা চায়, সেটি হচ্ছে পরিচয়ের ভিতর দিয়ে কল্পনার রোমান্স। সেইটি তুমি হতে দাও নি দূরে সরে থেকে। এত নিকটে থেকেও আমরা রয়েছি ঠিক একই গাছে প্রস্ফুটিত দুটি রজনীগন্ধার মতো। পাতার আড়ালে পড়ে থাকাতে যেমন একে অপরকে দেখতে পায় না, আমাদের তেমনি আড়াল করেছে দুর্জয় লজ্জা আর কুসংস্কারের বাধা। যা হোক, আজকে যখন এমনি অপ্রত্যাশিতভাবে এসে আমায় জাগিয়েছ, তখন আমায় কি করতে হবে বলে দাও। বুঝি যে আজকের রাত্রে চাই একটুখানি হালকা অথচ নির্মল আনন্দ কিন্তু তার প্রোগ্রাম আমার চাইতে বোধ করি তুমিই ভালো বলতে পারবে-হয়ত বা ঠিক করেই রেখেছ।
হাসিনা : প্রোগ্রাম করার মতো অবসর আমার হয় নি, এখন হবেও না। আর তার প্রয়োজনও নেই। চলে যাই বাইরে ছাদের কিনারে রেলিং ধরে দুজনে দাঁড়াই। তারপর যা প্রয়োজন হবে, তা আপনি আসবে প্রয়োজনেরই খাতিরে। প্রোগ্রাম করার দরকার নেই।
তারা দু’ জন দুটি নীড়ছাড়া প্রবাসী পাখীর মত এসে রেলিং ধরে দাঁড়ালো। কথা তাদের আপনি বন্ধ হয়ে গেলো। উপরে স্বচ্ছ রূপালী আকাশ। নীচে তারা দু’টি প্রাণী—নাকি শুভ্র সুন্দর দুটি মূর্তি—ঠিক সে সময়ে কেউ ধরতে পারত না। গ্রীক পুরাণের প্রেমের অধিষ্ঠাত্রী দেবী ভেনাসের বিশ্ববিশ্রুত রূপও এ দুটি প্রাণীর তখনকার সৌন্দর্যের কাছে হেরে যায়। নির্বাক দাঁড়াবো—পাশাপাশি হয়ে আড়চোখে পরস্পরের প্রতি চেয়ে সহজ শুভ্ৰ জ্যোৎস্নার নীচে নারী ও পুরুষের দাঁড়ানোতে যে সৌন্দর্য যে রূপ আছে, তার কাছে জগতের যে কোনও রূপ হার মেনে যায়। ।
কিন্তু নির্বাক থাকা বেশিক্ষণ তাদের পোষায় না; কারণ তারা জানে যে রাতের একটা নির্দিষ্ট মেয়াদ আছে যার বেশি সে থাকবে না।
হাসিনাই কথা কইল ; আজকের রাতটা ভোগ করব আমরা পুরোপুরি। তুমি রাজকুমার, আমি দূরদেশের রাজকুমারী। আমাকে পেয়েছ তুমি অনেক কষ্টের পর, আর এখানে এনেছ জাদুকরা চাদরে বসিয়ে আকাশপথে; কিন্তু মেয়াদ শুধু এই রাতটি ! কাল সকালে যদি জানতে পারেন রাজা ও রানী, তবে তাঁরা হয় করবেন আত্মহত্যা, কিংবা রাজকুমারের রাজ্য আক্রমণ। রোমান্সের সঙ্গে আত্মহত্যা বা আক্রমণের কোন সামঞ্জস্য নেই, রোমান্স ওদের সামনে দাঁড়াতেই পারে না। অতএব, তুমি এবং আমি শুধু এই রাতটি উপভোগ করব—উগ্র উপভোগের প্রচণ্ডতায় নয়, কোমল নমনীয় ভোগের মিষ্টি মিষ্টি গন্ধে। তোমায় জাগিয়েছি আমি একটি চুমো দিয়ে, এখন তুমি আমার সে দান শোধ দাও আর একটি চুমোর প্রণামীতে,—এই বলে অধর তার বাড়ীয়ে দিলো। নওশা মুখ নত করে হাসিনার অধরযুগলের রসাস্বাদ করলে ধীর স্থির মৃদু একটি স্পর্শে। এমন স্পৰ্শ—যে স্পর্শের বর্ণনা করতে গেলে ভাষার খেই যায় হারিয়ে।
খানিকক্ষণ নীরব।
নওশা বললো : আমাদের দু’ জনারই জীবননাট্যের সমাপ্তির মধ্যে আজকের দিনের ছবিটি একটা মহৎ স্থান অধিকার করবে। একটি নর ও একটি নারী, শুভ্র শান্ত আকাশের নীচে তন্ময় হয়ে রয়েছে দাঁড়িয়ে। মনে তাদের আলোড়িত হচ্ছে কত কথা, কিন্তু প্রকাশে বাধা না থাকলেও আছে রসনার জড়তা অর্থাৎ অক্ষমতা। দু’ জনে শুধু দাঁড়িয়ে থাকা—তার বেশি আর কি হতে পারে। কিন্তু এই দাঁড়িয়ে থাকা—এমন একটি রাতে দুটো স্ফুটনোমুখ নরনারীর দাঁড়িয়ে থাকা—এতে যে প্রশান্তি, যে একটা নির্ভরশীলতাপূর্ণ অনুভূতি আছে, তার তুলনা মিলে না জগতে। “তোমায় আমি ভালোবাসি এ কথাটি যদি আজকে রাতে বলি, তবে শয্যাত্যাগ করে তোমার উঠে আসার উদ্দেশ্যই ব্যর্থ হয়ে যায়। কারণ এই বাক্যটি ইতিপূর্বে কত লক্ষবার যে ধ্বনিত হয়েছে মানবের কণ্ঠে কণ্ঠে তার হিসাব চিত্রগুপ্তও রাখতে পারে নি। এখনও ঠিক এই মুহুর্তে কত জায়গায় যে এ-কথাটি বলা হচ্ছে তার ইয়ত্তা নেই। অতএব ভালোবাসার কথা আজ তোমার কাছে বলবো না। না বলার মধ্যে যে বলার হবে প্রকাশ, তাইতেই আমাদের শান্তি দেবে। এসো আমরা দু’জনে সামনা-সামনি হয়ে পা ছড়িয়ে বসি— তারপর চেয়ে থাকি পরস্পরের প্রতি। এতেই হবে সকল কথার পরিসমাপ্তি”, এই বলে সে বসে পড়লো, হাসিনাকেও ধরে বসালো!
কিন্তু চুপ করে অনেকক্ষণ বসে থাকা যায় না।
হাসিনা বললো : আজকে আমার কাছে একটি বড় সত্য ধরা পড়লো নওশা। সেটি এই যে, দূরে থেকে দেখা ও কলপনার মধ্যে থাকে যে একটা প্রচণ্ড কামনার আভাস, কাছে এসে মিশলে সেটি হয়ে যায় পবিত্র ও স্নিগ্ধ। তোমার আমার মাঝের ব্যবধান সৃষ্টি করেছিল যে একটা অস্বোয়াস্তি,
আজ রাতের মিলন তা দূর করে এনে দিল একটা সহজ সরল সম্বন্ধ। তোমায় আমি চাইতুম, কিংবা তুমি আমায় চাইতে, এর মধ্যে এবং আজকের এই একত্র হয়ে যাওয়ার মধ্যে আছে অনেক তফাৎ। তখন আমরা চাইতুম পরস্পরের দেহ, এখন চাই সান্নিধ্য, একটি চুমো, একটু স্পর্শ, একটু গল্প। বহুদিনের বিক্ষুব্ধ মন হয়ে গেলো এতে পরিষ্কার, প্রাণে এলো শান্তি। তোমায় ভালোবাসির “ভালোবাসি” শব্দটি—উঠে গিয়ে তার জায়গায় বসল “পেয়েছি”। এই পাওয়া—ক্ষণিকের এই পাওয়াই দীর্ঘ জীবনের মধ্যে একটি বড় অথচ মহৎ স্থান অধিকার করে রইবে বেঁচে। কারণ এতে যে একটি রোমান্স আছে সেটি শুধু দৈনন্দিন মিলনের অভিশাপ। আজকে রাতে ঘুম হলো না, মনে হলো তোমাকে চাই। এলুম চলে, সকল ভয় সকল লজ্জা ভেঙ্গে। তোমাকে পেলাম। লাভ কম হলো না। চাঞ্চল্য গেলো চলে; এলো আনন্দ— এইখানে হাসিনা নওশার চুলের উপর একটি চুমো খেলো আর নওশা খেলো হাসিনার জওহরের মত উজ্জ্বল চোখের পাতায়।
তারপর আবার চুপচাপ।
এবার নীরবতা ভাঙ্গলো নওশা । বললো : আগামী কাল তোমারও আজ রাতের কথা মনে থাকবে না— আমারও হয়ত থাকবে না । না থাকাই উচিত । ক্ষণিকের আনন্দ ক্ষণিকই মনে রাখা ভালো; কেননা মনে রাখলে আবার পেতে হবে ইচ্ছা। আর বেশি বেশি পেতে চাইলেই আসবে আনুষঙ্গিক সকল উপসর্গ। যাক গে ছাই, আর কথা বলবো না। আবার চল থাকি চেয়ে দু' জনেই দু' জনের দিকে।
অনেকক্ষণ কাটলো এভাবে। হঠাৎ হাসিনা পূর্বদিকে চেয়ে দেখলে শুকতারা বড় একটা রক্তজবার মত জ্বলছে।
এমন সময় ডাক শোনা গেল, হাসিনা! ও হাসিনা! ওঠ্ নামাজ পড়বিনে ? তার মায়েরই ডাক। আর দেরি করা যায় না, আবার দু’টি চুমো, তারপর যেমন এসেছিল—তেমনি দু’ জনেই যার যার ঘরের দিকে চলে গেল।
দুয়োরে ধাক্কা পড়ল। হাসিনা ধড়মড় উঠে বসলে তার পাশে খুঁজলে কাকে—নওশাকে। কিন্তু নওশা নেই। তবে কি সবটাই একটা স্বপ্ন ? তাই ত ! এই যে, সমস্ত বিছানা তার ঘামে ভিজে গেছে! উঃ—তাহলে কি সে সমস্ত রাতভর একটা দুঃস্বপ্ন দেখেছে। কিন্তু তার ভাববার সময় নেই, দুয়োর খুলে নামাজ পড়তে যেতে হচ্ছে।
পরদিন বেলা
দশটায় সে যখন সিঁড়ির নীচে ডায়ওসেসানের বাসে উঠছে তখন পাশে দেখলো ও ঘরের নওশা বই
হাতে ট্রামের অপেক্ষা করছে। তার হাসি পেল। এই ছেলেটাকে নিয়ে সারা রাত এমন একটা
বিশ্রী স্বপ্ন সে দেখলো কি করে? তবে কি সে দিনের বেলা ঐ রকমই ভাবে ? ছিঃ ! ছিঃ!
বাস তখন তাকে
নিয়ে চলছে। জানালা দিয়ে বাইরে চেয়ে দেখলো, নওশার ট্রাম তখনও আসে নি।