:::: সূচীপত্র ::::

শান্তনুর প্রতি জাহ্নবী

 

[জাহ্নবী দেবীর বিরহে রাজা শান্তনু একান্ত হইয়া রাজ্যাদি পরিত্যাগপূর্ব্বক বহু দিবস গঙ্গাতীরে উদাসীনভাবে কালাতিপাত করেনঅষ্টম বসু অবতার দেবব্রত (যিনি মহাভারতীয় ইতিবৃত্তে ভীষ্ম পিতামহ নামে প্রথিত) বয়ঃপ্রাপ্ত হইলে জাহ্নবী দেবী নিম্নলিখিত পত্রিকাখানির সহিত পুত্রবরকে রাজসন্নিধানে প্রেরণ করিয়াছিলেন]
বৃথা তুমি, নরপতি, ভ্রম মম তীরে,
বৃথা, অশ্রুজল তব, অনর্গল বহি,
মম জলদল সহ মিশে দিবানিশি!
ভুল ভূতপূর্ব্ব কথা, ভুলে লোক যথা
স্বপ্ননিদ্রা-অবসানে! এ চিরবিচ্ছেদে
এই হে ঔষধ মাত্র, কহিনু তোমারে!
হর-শির-নিবাসিনী হরপ্রিয়া আমি
জাহ্নবীতবে যে কেন নরনারীরূপে
কাটাইনু এত কাল তোমার আলয়ে,
কহি, শুনঋষিশ্রেষ্ঠ বশিষ্ঠ সরোষে
ভুতলে জন্মিতে শাপ দিলা বসুদলে
যে দিন, পড়িল তারা কাঁদি মোর পদে,
করিয়া মিনতি স্ত্তুতি নিস্কৃতির আশে
দিনু বরমানবিনী ভাবে ভবতলে
রিব এ গর্ভে আমি তোমা সবাকারে
বরিনু তোমারে সাধে, নরবর তুমি
কৌরব! ঔরসে তব ধরিনু উদরে
অষ্ট শিশু, অষ্ট বসু তারা, নরমণি!
ফুটিল এক মৃণালে অষ্ট সরোরুহ!
কত যে পুণ্য হে তব, দেখ ভাবি মনে!
সপ্ত জন ত্যজি দেহ গেছে স্বর্গধামে
অষ্টম নন্দনে আজি পাঠাই নিকটে;
দেবনররূপী রত্মে গ্রহ যত্মে তুমি
রাজন্‌ ! জাহ্নবীপুত্র দেবব্রত বলী
উজ্জ্বলিবে বংশ তব, চন্দ্রবংশপতি ;
শোভিবে ভারত-ভালে শিরোমণিরূপে,
যথা আদিপিতা তব চন্দ্রচুড়-চুড়ে!
পালিয়াছি পুত্রবরে আদরে, নৃমণি,
তব হেতুনিরখিয়া চন্দ্রমুখ, ভুল
এ বিচ্ছেদ-দুঃখ তুমিঅখিল জগতে,
নাহি হেন গুণী আর, কহিনু তোমারে!
মহাচল-কুল-পতি হিমাচল যথা;
নদপতি সিন্ধুনদ; বন-কুলপতি
খাণ্ডব; রথীন্দ্রপতি দেবব্রত রথী
বশিষ্ঠের শিষ্যশ্রেষ্ঠ! আর কব কত?
আগনি বাগ্‌দেবী, দেব, রসনা-আসনে
আসীনা ; হৃদয়ে দয়া, কমলে কমলা;
যমসম বর ভুজে! গহন বিপিনে
যথা সর্ব্বভুক্‌ বহ্নি, দুর্ব্বার সমরে!
তব পুণ্যবৃক্ষ-ফল এই, নরপতি!
স্নেহের সরসে পদ্ম! আশার আকাশে
পূর্ণশশী! যত দিন ছিনু তব গৃহে
পাইনু পরম প্রীতি! কৃতজ্ঞতাপাশে
বেঁধেছ আমারে তুমি; অভিজ্ঞানরূপে
দিতেছি এ রত্ম আমি, গ্রহ, শান্তমতি
পত্মীভাবে আর তুমি ভেবো না আমারে
অসীম মহিমা তব ; কুল মান ধনে
নরকুলেশ্বর তুমি এ বিশ্বমণ্ডলে!
তরুণ যৌবন তব ;যাও ফিরি দেশে ;
কাতরা বিরহে তব হস্তিনা নগরী!
যাও ফিরি, নরবর, আন গৃহে বরি
বরাঙ্গী রাজেন্দ্রবালে; কর রাজ্য সুখে!
পাল প্রজা ; দম রিপু ; দণ্ড পাপাচারে
এই হে সুরাজনীতি ; বাড়াও সতত
সতের আদর সাধি সংক্রিয়া যতনে!
বরিও এ পুত্রবরে যুবরাজ-পদে
কালেমহাযশা পুত্র হবে তব সম,
যশস্বি, প্রদীপ যথা জ্বলে সমতেজে
সে প্রদীপ সহ, যার তেজে সে তেজস্বী!
কি কাজ অধিক কয়ে? পূর্ব্বকথা ভুলি,
করি ধৌত ভক্তিরসে কামগত মনঃ
প্রণম সষ্টাঙ্গে, রাজা ! শৈলেন্দ্রনন্দিনী
রুদ্রেন্দ্রগৃহিণী গঙ্গা আশীষে তোমারে
যত দিন ভবধামে রহে এ প্রবাহ,
ঘোষিবে তোমার যশ, গুণ ভবধামে!
কহিবে ভারতজন, ধন্য ক্ষত্রকুলে
শান্তনু, তনয় যার দেবব্রত রথী!
লয়ে সঙ্গে পুত্রধনে যাও রঙ্গে চলি
হস্তিনায়, হস্তিগত! অন্তরীক্ষে থাকি
তব পুরে, তব সুখে হইব হে সুখী,
তনয়ের বিধুমুখ হেরি দিবানিশি!
ইতি শ্রীবীরাঙ্গনাকাব্যে জাহ্নবীপত্রিকা নাম
নবমঃ সর্গঃ
------xXx------
. গল্প
. মহাদেবের শিরোভুষণ চন্দ্রপুরাণে চন্দ্র চন্দ্রবংশের আদিপুরুষ রূপে বর্ণিত
. নিদর্শন
.রাজনন্দিনীকে
. সৎক্রিয়া বা পূণ্যকর্ম

সূত্র : মধুসূদন রচনাবলী-সব্যসাচী রায় (সম্পাদনায়)