:::: সূচীপত্র ::::
কাজী ইমদাদুল হক
(১৮৮২-১৯২৬)

‘আবদুল্লাহ’র কাহিনীকার হিসেবে খ্যাত কাজী ইমদাদুল হক। ভারত বিভাগ হওয়া আগে যে কয়জন বাঙালি-মুসলমান লেখকদের নাম নিতে হয়, তাঁদের অন্যতম একজন, যার জীবন আর সাহিত্য জীবদ্দশায় ছিল অবিচ্ছদ্য ।

১৯২০ সালের মে মাসে ইমদাদুল হকের সম্পাদনায় প্রকাশিত হয় শিক্ষাবিষয়ক মাসিক পত্রিকা 'শিক্ষক'। পত্রিকাটি তিন বছর চালু ছিল। তিনি কবিতা, উপন্যাস, প্রবন্ধ, শিক্ষা ও নীতিমূলক শিশুসাহিত্য রচনায় খ্যাতি অর্জন করেন। ১৯০৩ সালের সূচনালগ্ন থেকে নবনূর, প্রবাসী ও ভারতী পত্রিকাসহ প্রভৃতি পত্রিকায় তাঁর কবিতা ও প্রবন্ধ নিয়মিত প্রকাশিত হতে থাকে।

সৈয়দ আবুল মকসুদের ভাষায়, ‘কাজী ইমদাদুল হক ছিলেন তার সমসাময়িক মুসলমান লেখকদের মধ্যে অগ্রসর, আধুনিক ও অসাম্প্রদায়িক। তিনি ছিলেন একজন অবিচল বাঙালি জাতীয়তাবাদী। শুধু সাহিত্য নয়; পাশ্চাত্যের দর্শন ও বিজ্ঞানেরও তিনি ছিলেন একজন গভীর পাঠক।’
তাঁর প্রদর্শিত সাহিত্যপথ বেয়েই পরবর্তী প্রজন্মের বহু লেখক-সাহিত্যিকরা হেঁটেছেন এবং আমাদের বর্তমানকে সমৃদ্ধতর করে তুলেছেন। পথিকৃৎ হিসেবে কাজী ইমদাদুল হক সর্বদাই থাকবেন অগ্রগণ্য।’


তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থসমূহ :
আঁখিজল (কবিতা সংগ্রহ-১৯০০),
‘মোসলেম জগতে বিজ্ঞান চর্চা’ (প্রথম সরল দেবী চৌধুরানী সম্পাদিত ভারতী পত্রিকায় প্রকাশিত হয়,পরে ১৯০৪ পুস্তক আকারে প্রকাশ হয়),
‘ভূগোল শিক্ষা প্রণালী’ (দুই খণ্ড, ১৯১৩, ১৯১৬),
নবীকাহিনী (১৯১৭),
প্রবন্ধমালা (১৯১৮),
‘কামারের কান্ড’ (১৯১৯) ও
‘আবদুল্লাহ’ (১৯৩২)।

‘আবদুল্লাহ’ উপন্যাসটি লেখকের জীবদ্দশায় সম্পূর্ণ বা প্রকাশ হয়নি। তিনি এ উপন্যাসটি জীবনের শেষান্তে শুরু করলেও শেষ করে যেতে পারেননি। পরবর্তীতে তাঁর খসড়ার ভিত্তিতে উপন্যাসটি সম্পূর্ণ করা হয় এবং তা ১৯৩২ সালে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়।
১৯৬৮ সালে কেন্দ্রীয় বাংলা উন্নয়ন বোর্ড (আজকের বাংলা একাডেমি) আবদুল কাদিরের সম্পাদনায় প্রকাশ করে 'কাজী ইমদাদুল হকের রচনাবলি'।

বাঙালি মুসলমান সমাজের কল্যাণসাধন ছিল ইমদাদুল হকের সাহিত্য সাধনার মূল লক্ষ্য। ইমদাদুল হক ১৯০৪ সালে কলকাতা মাদ্রাসায় অস্থায়ী শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। ১৯০৬ সালে তিনি আসামের শিলং-এ শিক্ষা বিভাগের উচ্চমান সহকারী হন। পরের বছর তিনি ঢাকা মাদ্রাসার শিক্ষক নিযুক্ত হন। ১৯১১ সালে ঢাকার শিক্ষক প্রশিক্ষণ মহাবিদ্যালয়ে ভূগোলের অধ্যাপক, ১৯১৪ সালে ঢাকা বিভাগের মুসলিম শিক্ষার সহকারী স্কুল-পরিদর্শক এবং ১৯১৭ সালে কলকাতা ট্রেনিং স্কুলের প্রধান শিক্ষক নিযুক্ত হন। ১৯২১ সালে নবপ্রতিষ্ঠিত ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের প্রথম কর্মাধ্যক্ষ হয়ে জীবনের শেষদিন পর্যন্ত উক্ত পদে বহাল ছিলেন। তিনি বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য পত্রিকা (১৯১৮) প্রকাশনা কমিটির সভাপতি ছিলেন। অত্যন্ত যোগ্যতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে শিক্ষা বিভাগের দায়িত্ব পালন করায় সরকার তাঁকে ১৯১৯ সালে 'খান সাহেব' এবং ১৯২৬ সালে 'খান বাহাদুর' উপাধিতে ভূষিত করে।

‘আবদুল্লাহ’ উপন্যাসে তিনি তৎকালীন মুসলিম সমাজের নানা দোষত্রুটি অতিশয় দক্ষতার সঙ্গে তুলে ধরেন,উপন্যাসটিকে বাঙালি মুসলমান সমাজের সার্থক দর্পণ বলা যায়। বুদ্ধির অন্ধতার বিরুদ্ধেই ছিল কাজী ইমদাদুল হকের কলম-যুদ্ধ। তাঁর সামগ্রিক মূল্যায়ন করা খুব সহজ কাজ নয়; তাঁকে বিচার করতে হবে তার কালের মানদণ্ডে। ইতিহাসের যে সময় তিনি জন্মেছিলেন এবং বড় হয়ে উঠেছেন, সেসময় নানারকম সামাজিক ও
সাংস্কৃতিক বৈরিতা ছিল বাস্তবতা, সেই বৈরিতা অতিক্রম করে একটি শক্ত মাটি খুঁজে নেওয়ার চেষ্টাই ‘আবদুল্লাহ’।