:::: সূচীপত্র ::::
মোহাম্মদ নজিবর রহমান সাহিত্যরত্ন
(১৮৬০-১৯২৩)

আজকের দিনে বাংলাদেশের বহু জনপ্রিয় লেখকদেরও উপরে স্থান পেতে পারেন মোহাম্মদ নজিবর রহমান। এই খ্যাতিমান লেখক আজ থেকে প্রায় শতবর্ষ আগে এক উপন্যাস লিখে গিয়েছিলেন, যা আজ সময়ের আবর্তে ক্লাসিক কথাসাহিত্যরূপে অবহিত হয়।


পূর্ব-বাংলায় ‘বিষাদসিন্ধু’র পরে তাঁর লেখা উপন্যাস ‘আনোয়ারা’ সাহিত্য-জগতে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে। ১৯১৪ সালের ১৫ জুলাই উপন্যাসটি প্রথম প্রকাশিত হয় এবং খুব অল্প সময়ে অভাবনীয় পাঠকপ্রিয়তা লাভ করে। ১৯৫৬ সালে ‘আনোয়ারা’ সম্পর্কে ড. মুহম্মদ আবদুল হাই ও সৈয়দ আলী আহসান 'বাংলা সাহিত্যের ইতিবৃত্ত (আধুনিক যুগ)'-এ বলেছেন,
“জনপ্রিয়তা দিয়ে যদি কোন বইয়ের বিচার করতে হয়, তাহলে মোহাম্মদ নজিবর রহমান রচিত ‘আনোয়ারা’র দাবিই সর্বাগ্রে বিবেচ্য। ১৯১১ থেকে ১৪ সালের মধ্যে এ বইটি প্রথম প্রকাশিত হয়। ১৯৪৯ সালে এ বইটির ত্রয়োবিংশতি সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছে এবং এ যাবৎ ‘আনোয়ারা’র দেড়লক্ষ কপি নিঃশেষিত হয়েছে।”

১৯৬১ সালে (বাংলা ১৩৬৮ সনের চৈত্র মাসে) এর সাতাশতম সংস্করণ প্রকাশিত হয় এবং ঐ সময় পর্যন্ত এর সাড়ে পাঁচ লক্ষ কপি বিক্রয় হয় বলে জানা যায়। কলকাতা ও ঢাকা থেকে এ পর্যন্ত এ উপন্যাসের ৬০টিরও বেশি সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছে। ‘আনোয়ারা' এক সময় পাঠ্য-তালিকাভুক্ত ছিল।

নজিবর রহমান সাহিত্যরত্ন তাঁর উপন্যাসে তাঁর সমকালীন জীবন ও সমাজকে যথাযথভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। সে সময়কার মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা, স্বপ্ন-কল্পনা ও স্খলন-পতনকে তিনি বাস্তবসম্মতভাবে রূপায়িত করতে সচেষ্ট হয়েছেন। তাছাড়া মানবজীবনের কতগুলো চিরায়ত মূল্যবোধ যেমন-প্রেম, ন্যায়পরায়ণতা ও মানুষের প্রতি মানুষের মমত্ববোধ ইত্যাদি তাঁর লেখায় যথাযথভাবে ফুটে উঠেছে। এসব কারনেই তাঁর রচনা সেসময়ে যেমন ব্যাপকভাবে সমাদৃত ও জনপ্রিয়তা লাভ করেছে, তেমনি তা চিরকালীন মানুষের কাছেও প্রশংসিত হয়েছে, বিশেষত তাঁর রচিত ‘আনোয়ারা' উপন্যাস বাংলা সাহিত্যে ক্লাসিক মর্যাদা পেয়েছে।

১৯১৭- ১৯১৮ সালের মধ্যে ‘আনোয়ারা' উপন্যাসের পরিশিষ্ট বা সিকুয়্যাল হিসাবে 'প্রেমের সমাধি' প্রকাশিত হয়। ১৯৬৩ সালে (বাংলা ১৩৭০ বঙ্গাব্দে) এর উনিশতম সংস্করণ প্রকাশিত হয়। আনোয়ারার মত এটিও ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে।

মোহাম্মদ নজিবর রহমান ২০টির মতো উপন্যাস রচনা করেছেন। সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:
আনোয়ারা(১৯১১);
চাঁদতারা বা হাসান গঙ্গা বাহমনি (১৯১৮);
পরিণাম (১৯১৮);
গরীবের মেয়ে,(১৯২৩)
দুনিয়া আর চাই না ( ছোটগল্প-আখ্যান ১৯২৩);
মেহেরউন্নিসা,
প্রেমের সমাধি (১৯১৮ ‘আনোয়ারা’র সিক্যুয়াল) ইত্যাদি।
এ ছাড়া ‘বিলাতী বর্জন রহস্য’ (১৯১৪) ও ‘সাহিত্য প্রসঙ্গ’ নামে তাঁর দু’টি গদ্য পুস্তিকাও রয়েছে।

গত ১৮ অক্টোবর ২০১৫ইং সিরাজগঞ্জের দৈনিক কলম সৈনিক কার্যালয়ে কথা সাহিত্যিক নজিবর রহমান সাহিত্যরত্নের ৯২তম মৃত্যুবার্ষিকী পালন উপলক্ষে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের উপস্থিতিতে নজিবর রহমান সাহিত্যরত্ন একাডেমী সিরাজগঞ্জ’র আত্মপ্রকাশ ঘটে।