২৪
নিশাকালে নদী তীরে বটবৃক্ষ-তলে শিব-মন্দির
রাজসূয়-যজ্ঞে যথা রাজাদল চলে
রতন-মুকুট শিরে ; আসিছে সঘনে
অগন্য
জোনাকীব্রজ, এই তরুতলে
পূজিতে
রজনী-যোগে বৃষভ-বাহনে১।
ধূপরূপ পরিমল
অদূর কাননে
পেয়ে,
বহিতেছে তাহে হেথা কুতূহলে
মলয় ;
কৌমুদী, দেখ, রজত-চরণে
বীচি-রব-রূপ পরি নূপুর, চঞ্চলে
নাচিছে; আচাৰ্য্য-রূপে এই তরু-পতি
উচ্চারিছে বীজমন্ত্র। নীরবে অম্বরে,
তারাদলে তারানাথ করেন প্রণতি
(বোধ হয়) আরাধিয়া দেবেশ শঙ্করে !
তুমিও, লো কল্লোলিনি, মহাব্ৰতে ব্ৰতী,—
সাজায়েছ, দিব্য সাজে, বর-কলেবরে !
২৫
ছায়াপথ
কহ মোরে, শশিপ্রিয়ে, কহ, কৃপা করি,
কার হেতু নিত্য তুমি সাজাও গগনে,
এ পথ,—উজ্জ্বল কোটি মণির কিরণে ?
এ সুপথ দিয়া কি গো ইন্দ্রাণী সুন্দরী
আনন্দে ভেটিতে যান নন্দন-সদনে
মহেন্দ্রে, সঙ্গেতে শত বরাঙ্গী অপ্সরী,
মলিনি ক্ষণেক কাল চারু তারা-গণে—
সৌন্দর্য্যে ?—এ কথা দাসে কহ, বিভাবরি !
রাণী তুমি ; নীচ আমি ; তেঁই ভয় করে,
অনুচিত বিবেচনা পার করিবারে
আলাপ আমার সাথে ; পবন-কিঙ্করে,—
ফুল-কুল সহ কথা কহ দিয়া যারে,
দেও কয়ে ; কহিবে সে কানে, মৃদুস্বরে,
যা কিছু ইচ্ছহ, দেবি, কহিতে আমারে !
২৬
কুসুমে কীট
কি পাপে, কহ তা মোরে, লো বন-সুন্দরি,
কোমল হৃদয়ে তব পশিল,—কি পাপে—
এ বিষম যমদূত ? কাঁদে মনে করি
পরাণ যাতনা তব ; কত যে কি তাপে
পোড়ায় দুরন্ত তোমা, বিষদন্তে হরি
বিরাম দিবস নিশি ! মৃদে কি বিলাপে
এ তোমার দুখ দেখি সখী মধুকরী,
উড়ি পড়ি তব গলে যবে লো সে কাঁপে ?
বিষাদে মলয় কি লো, কহ, সুবদনে,
নিশ্বাসে তোমার ক্লেশে, যবে লো সে আসে
যাচিতে তোমার কাছে পরিমল-ধনে ?
কানন-চন্দ্রিমা তুমি কেন রাহু-গ্রাসে?
মনস্তাপ-রূপে রিপু, হায়, পাপ-মনে,
এইরূপে, রূপবতি, নিত্য সুখ নাশে !
২৭
বটবৃক্ষ
দেব-অবতার ভাবি বন্দে যে তোমারে,
নাহি চাহে মনঃ মোর তাহে নিন্দা করি,
তরুরাজ ! প্রত্যক্ষতঃ ভারত-সংসারে,
বিধির করুণা তুমি তরু-রূপ ধরি !
জীবকুল-হিতৈষিণী, ছায়া সু-সুন্দরী,
তোমার দুহিতা, সাধু ! যবে বসুধারে
দগধে আগ্নেয় তাপে, দয়া পরিহরি,
মিহির, আকুল জীব বাঁচে পূজি তাঁরে।
শত-পত্রময় মঞ্চে, তোমার সদনে,
খেচর—অতিথি-ব্রজ, বিরাজে সতত,
পদ্মরাগ ফলপুঞ্জে ভুঞ্জি হৃষ্ট-মনে ;—
মৃদু-ভাষে মিষ্টালাপ কর তুমি কত,
মিষ্টালাপি, দেহ-দাহ শীতলি যতনে !
দেব নহ; কিন্তু গুণে দেবতার মত।