দুই সুর
কোকিল—কালো কোকিল রচে সুরের ফুলে ফুলঝুরি,
বসন্তে সে ভুলায়ে আনে হাওয়ায় করি' মন চুরি !
কুজ্ঝটিকা-কুটিল
নভে বুলায় তূলি রঙ্গিলা,
দোলায় তৃণ-বল্লরীতে
মঞ্জু ফুল-মঞ্জরী !
বনের যত মনের কথা সেই জেনেছে অন্তরে,
কিশোর কিশলয়ের আশা তারি সে সুরে সন্তরে !
শীতের গড়ে পাথর নড়ে-মূহুমুর্হু হয় ঢিলা,
মোচন হ'ল বন্দী যত মুকুল কুহু-মন্তরে !
সুখীর সুখী শিখী সে নাচে হেলায়ে গ্ৰীবা গৌরবে,
আওয়াজে তার কদম ফোটে,—কানন ভরে সৌরভে ;
কলাপ মেলি' করে সে কেলি রৌদ্রে স্নেহ সঞ্চারি',
ঘনায় ছায়া মোহন মায়া উচ্চকিত ঐ রবে !
দগ্ধ দেশে মুগ্ধ নাচে নয়ন মেঘে অর্পিয়া,—
মেদুর নভে ধূমল ফণী বেড়ায় যবে দৰ্পিয়া !
তমাল 'পরে নৃত্য করে কুহক কেকা, উচ্চারি',
মূচ্ছি' পড়ে সৰ্প শত সত্ৰশিখা তৰ্পিয়া !
বনের কুহু, বনের কেকা,—কুহক-ভরা যুগ্ম-রাগ,
দেয় গো বাঁটি' নিখিল মাঝে আনন্দেরি যজ্ঞভাগ !—
অনাদি সুধা,— অনাদি সোম,—হয় না কেহ বঞ্চিত
;
অনাদি সাম, অনাদি ঋক্ পূর্ণ করে
বিশ্ব-যাগ।
মনের কুহু—মনের কেকা,—অনাদি তারো মূর্চ্ছনা,
গোপন তার প্রচার, তবু, তুচ্ছ না। সে তুচ্ছ না।
গহন-গেহে নিভৃতে রহে নিখিল-হৃদি-সঞ্চিত,
মিলিয়া আছে উহারি
মাঝে বরষা সাথে জ্যোৎসনা।
আপনি পড়ে ছন্দে ধরা আপনি তার উদ্বোধন,—
ক্ৰৌঞ্চী কাঁদে করুণ কুহু,—কবি সে—কেকা,—ক্ষুব্ধ মন।
উলসি' ওঠে গুপ্ততোয় সুপ্ত নদী সুড়ঙ্গের,
কল্পলতা মুকুল মেলি' বিতরে চির গুপ্ত-ধন।
আদিম কুহু, আদিম কেকা,—ধরিবে কেবা ছন্দে সে,—
—জনম যার কামনা-লোকে
মনের সুগোপন দেশে ;—
ফুটায়ে ফুল, ছুটায়ে হাওয়া, লুটায়ে ফণা ভুজঙ্গের
মিলায়ে দুঁহু গাহিবে মুহু—গাহিবে মহানন্দে সে।ৱ
ফুটিতে যাহা ঝরিয়া পড়ে,—গাঁথিবে তারে সঙ্গীতে !
কামনা বুঝি কনক-ধুনী সুমেরু চূড়া লঙ্ঘিতে !
মানস-লীনা বাজে যে বীণা
শিখিবে,তারি মূর্চ্ছনা,—
প্ৰকাশ যার আকাশ-তটে
অযুত শত ভঙ্গীতে।
হৃদয়ে মুহু কোকিল কুহু ময়ুর কেকা রব করে,
গহন প্ৰাণ-কুহর মাঝে স্বপন-ঘেরা গহ্বরে !
ধেয়ানে দোঁহে আরতি
করি' ফুটাবে মেঘে জ্যোঁৎসনা
স্মিরিতি সাথে পীরিতি, আজি মন্দ্ৰ-মধু মন্তরে।
সূত্র : কুহু ও কেকা — সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত [চতুর্থ সংস্করণ/১৯২৯]
বাঙালীত্বের আয়নায় দ্বারকানাথ
উত্তরমুছুনপ্রকাশনীর নাম কী