১৩
সারিকা
১
ওই যে পাখিটি, সখি, দেখিছ পিঞ্জরে
রে,
সতত চঞ্চল,—
কভু কাঁদে,
কভু গায়,
যেন পাগলিনী-প্রায়,
জলে যথা জ্যোতিবিম্ব—তেমতি তরল !
কি ভাবে ভাবিনী যদি বুঝিতে, স্বজনি,পিঞ্জর ভাঙিয়া ওরে ছাড়িতে অমনি !
২
নিজে যে দুঃখিনী, পরদুঃখ বুঝে সেই রে,
কহিনু তোমারে ;—
আজি ও পাখীর মনঃ বুঝি আমি বিলক্ষণ—
আমিও বন্দী লো আজি ব্রজ-কারাগারে !
সারিকা অধীর ভাবি কুসুম-কানন,
রাধিকা অধীর ভাবি রাধা-বিনোদন !
৩
বনবিহারিণী ধনী বসন্তের সখী রে—
শুকের সুখিনী ?
বলে ছলে ধরে তারে, বাঁধিয়াছ কারাগারে—
কেমনে ধৈরজ ধরি রবে সে কামিনী?
সারিকার দশা, সখি, ভাবিয়া অন্তরে,
রাধিকারে বেঁধো না লো সংসার-পিঞ্জরে !
8
ছাড়ি দেহ বিহগীরে মোর অনুরোধে রে—
হইয়া সদয়।
ছাড়ি দেহ যাক্ চলি, হাসে যথা বনস্থলী—
শুকে দেখি সুখে ওর জুড়াবে হৃদয় !
সারিকার ব্যথা সারি, ওলো দয়াবতি,
রাধিকার বেড়ি ভাঙ—এ মম মিনতি।
৫
এ ছার সংসার আজি আঁধার, স্বজনি রে—
রাধার নয়নে !
কেনে তবে মিছে তারে রাখ তুমি এ আঁধারে—
সফরী কি ধরে প্রাণ বারির বিহনে ?
দেহ ছাড়ি, যাই চলি যথা বনমালী ;
লাগুক্ কুলের মুখে কলঙ্কের কালি !
৬
ভাল যে বাসে, স্বজনি, কি কাজ তাহার রে
কুলমান ধনে ?
শ্যামপ্রেমে উদাসিনী রাধিকা শ্যাম-অধীনী—
কি কাজ তাহার অাজি রত্ন আভরণে ?
মধু কহে, কুলে ভুলি কর লো গমন—
শ্ৰীমধুসূদন, ধনি, রসের সদন !
সূত্র : মধুসূদন রচনাবলী-সব্যসাচী রায় (সম্পাদনায়)