:::: সূচীপত্র ::::
১৩
সারিকা

ওই যে পাখিটি, সখি, দেখিছ পিঞ্জরে রে,
         সতত চঞ্চল,—
কভু কাঁদে, কভু গায়, যেন পাগলিনী-প্রায়,
    জলে যথা জ্যোতিবিম্বতেমতি তরল !
    কি ভাবে ভাবিনী যদি বুঝিতে, স্বজনি,
    পিঞ্জর ভাঙিয়া ওরে ছাড়িতে অমনি !


নিজে যে দুঃখিনী,    পরদুঃখ বুঝে সেই রে,
         কহিনু তোমারে ;
জি ও পাখীর মনঃ বুঝি আমি বিলক্ষণ
   আমিও বন্দী লো আজি ব্রজ-কারাগারে !
   সারিকা অধীর ভাবি কুসুম-কানন,
   রাধিকা অধীর ভাবি রাধা-বিনোদন !



বনবিহারিণী ধনী বসন্তের সখী রে
         শুকের সুখিনী ?
বলে ছলে ধরে তারে, বাঁধিয়াছ কারাগারে
   কেমনে ধৈরজ ধরি রবে সে কামিনী?
  সারিকার দশা, সখি, ভাবিয়া অন্তরে,
  রাধিকারে বেঁধো না লো সংসার-পিঞ্জরে !

8
ছাড়ি দেহ বিহগীরে মোর অনুরোধে রে
         হইয়া সদয়।
ছাড়ি দেহ যাক্‌ চলি,   হাসে যথা বনস্থলী
     শুকে দেখি সুখে ওর জুড়াবে হৃদয় !
     সারিকার ব্যথা সারি, ওলো দয়াবতি,
     রাধিকার বেড়ি ভাঙএ মম মিনতি।


এ ছার সংসার আজি আঁধার, স্বজনি রে
         রাধার নয়নে !
কেনে তবে মিছে তারে রাখ তুমি এ আঁধারে
    সফরী কি ধরে প্রাণ বারির বিহনে ?
    দেহ ছাড়ি, যাই চলি যথা বনমালী ;
    লাগুক্ কুলের মুখে কলঙ্কের কালি !


ভাল যে বাসে, স্বজনি, কি কাজ তাহার রে
         কুলমান ধনে ?
শ্যামপ্রেমে উদাসিনী রাধিকা শ্যাম-অধীনী
    কি কাজ তাহার অাজি রত্ন আভরণে ?
    মধু কহে, কুলে ভুলি কর লো গমন
    শ্ৰীমধুসূদন, ধনি, রসের সদন !

সূত্র : মধুসূদন রচনাবলী-সব্যসাচী রায় (সম্পাদনায়)